Pages

Monday, 1 October 2018

Divorce

বিবাহ বিচ্ছেদের বিরূপ প্রভাব




বিবাহিত নর-নারীর জীবিত অবস্থায় আইনগত বিবাহ সম্পর্কের পরিসমাপ্তিই ডিভোর্স বা বিবাহ বিচ্ছেদ শত শত বছর ধরে বিবাহকে অভঙ্গনীয় মনে করা হলেও বর্তমানে বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই বিবাহবিচ্ছেদকে অনুমোদন করে গত কয়েক দশকে বিশ্বব্যাপী বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা অতি মাত্রায় বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশও এর বাইরে নয় । গত এক দশকে দ্বিগুণ হারে বিবাহ বিচ্ছেদ বেড়েছে বিবিএস এর প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০৬ সালে বাংলাদেশের প্রতি হাজারে বিচ্ছেদের হার ছিল দশমিক ৬ বর্তমানে এ হার বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে এক দশমিক এক বিচ্ছেদের আবেদনকারীদের মধ্যে হাজারে এক দশমিক সাত জন রয়েছেন উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করা শুধু ঢাকা সিটি করপোরেশন  এলাকাতেই দিনে ৫০টির বেশি বিচ্ছেদের আবেদন জমা পড়ছে। সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ থেকে ২০১৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় বিচ্ছেদের নোটিশ পাঠানো হয়েছে ২৪,৯১২টি।এর মধ্যে পুরুষের পাঠানো আবেদনের সংখ্যা ৮০৯৬টি।অর্থাৎ নারীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে দ্বিগুণ ২০১৬ সালে রাজধানী বাসিন্দাদের মোট ৪,৮৪৭টি বিচ্ছেদের আবেদন জমা পড়েছেএর মধ্যে পুরুষের ১৪২১টি এবং নারীদের ৩৪২৬টি ঢাকার বাইরে বরিশাল বিভাগে বর্তমানে প্রতিমাসে ১০ থেকে ১৫টি বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছেগত পাঁচ বছরে খুলনা মহানগরীতে মোট বিচ্ছেদ হয়েছে ৬,৫৮৭টি অন্যান্য বিভাগের মতো  চট্টগ্রামেও বিবাহবিচ্ছদের  হিড়িক পড়েছে গত বছরের জানুয়ারি থেকে  অক্টোবর পর্যন্ত  চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তথ্য মতে,প্রতিমাসে গড়ে ৩৩৮ টি বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে।
এখন প্রশ্ন হল, কেন বিবাহবিচ্ছেদ এত উচ্চহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে ? আমরা যতই সামনে এগিয়ে যাচ্ছি সামাজিক জটিলতা ততই বৃদ্ধি পাচ্ছেআর এর প্রভাবে বেড়ে যাচ্ছে বিবাহবিচ্ছেদের হারতবে সামাজিক জটিলতা ও ডিভোর্সের ধরণ বিশ্লেষণ করলে এর কিছু কারণ চিহ্নিত করা যায় শিল্পায়নের ফলে পরিবার কাঠামোর পরিবর্তন(যৌথ পরিবার থেকে একক পরিবার),স্বামী-স্ত্রীর আত্নকেন্দ্রিকতা,সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতারণার সুযোগ বেড়ে যাওয়া,নৈতিক স্খলন, প্রবাসী সমস্যাসহ আরো অনেক কারণ আছে।আমাদের পরিবার কাঠামো পরিবর্তিত হচ্ছে সাথে সাথে পরিবারের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিও পরিবর্তিত হচ্ছে। সমাজবিজ্ঞনীরা বলছেন ,আগে মানুষ ছিল পরিবার কেন্দ্রিক ,কিন্তু এখন মানুষ দিন দিন আত্নকেন্দ্রিক হয়ে যাচ্ছে।অর্থাৎ পূর্বে মানুষ ধারনা করত ব্যক্তি পরিবারের জন্য( ইনডিভিজুয়াল ফর ফ্যামিলি) আর এখন ধারনা করা হয় পরিবার ব্যক্তির  জন্য(ফ্যামিলি ফর ইনডিভিজুয়াল)। আবার নারীরা এখন শিক্ষিত এবং কর্মজীবী হওয়ায় একসমায়ের গত্বাঁধা ধারনা ‘নারীরা একা জীবন ধারন করতে সক্ষম নয়’-এ ধারনারও পরিবর্তন হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতারণার যেসব সম্পর্ক গড়ে উঠছে তা খুব সহজেই বিচ্ছেদের দিকে যাচ্ছে।আবার প্রবাসীদের ক্ষেত্রে অবিশ্বাস,সন্দেহ,পরকীয়া বিশেষ ভূমিকা পালন করছে।
পরিসংখ্যান থেকে দেখতে পাচ্ছি,বিবাহবিচ্ছেদের আবেদনকারীদের মধ্যে নারীর সংখ্যাই বেশি। এর জন্য তাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা,সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধিই দায়ী।পেশাগত উন্নয়নের কারণে নারীরা পরিবারের চেয়ে পেশার গুরুত্ব বেশি দিচ্ছে। আর্থসামাজিক নিশ্চয়তা থাকার কারণে পরিবারের  সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই গ্রহণ করছে। ফলে বিবাহবিচ্ছেদের ক্ষেত্রে নারীদের পক্ষ থেকে সাড়া বেশি পাওয়া যাচ্ছে।প্রতিনিয়ত কলহ-বিদ্রোহের ভিতরে থাকার চেয়ে অনেকে ডিভোর্সকে সমাজের জন্য ইতিবাচক হিসেবে দেখলেও ঐ পরিবারের সন্তান সন্ততি বিচ্ছেদের এর  বিরূপ প্রভাব থেকে মুক্তি পাচ্ছে না। তবে এ প্রভাবের পরিমাণ বিচ্ছেদ পূর্বকালীন পিতামাতার দ্বন্দ্ব, সে সময় তাদের বয়স,ভাইবোন আছে কি না? দাদা- দাদী এবং অন্যান্য আত্নীয় স্বজনের উপস্থিতির ভিত্তিতে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে বিচ্ছেদের পর সংশ্লিষ্ট পরিবারের ছেলেমেয়েরা ব্যপক মানসিক উদ্বেগে ভোগে।এসব পরিবারের বিদ্যালয় পূর্বের ছেলেমেয়েরা হতচকিত ও ভীত হয়ে পড়ে এবং বিচ্ছেদের জন্য নিজেদেরকে দায়ী ভাবতে শুর করে।একটু বয়স্ক ছেলেমেয়েরা সবকিছুই বুঝতে পারে। তাদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে তারা মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে।তাই তাদের জন্য কল্যাণমূলক ব্যবস্থাদি ও গৃহসংস্থান,শিশু পরিষেবার সুযোগ বৃদ্ধি করা দরকার যাতে তারা অকালে ঝরে না পড়ে।


No comments:

Post a Comment