Pages

Saturday, 28 July 2018

Struggle of woman.



 কর্মজীবী নারীর ঘর গেরস্থলী
 
বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর
অর্ধেক তার আনিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর ’’

পঙক্তিটি আমরা প্রতিনিয়ত শুনছি কিন্তু এর মর্মার্থ বুঝতে বোধ হয় আমরা অক্ষম হয়েছি ।যদি আমরা বুঝতাম তবে এভাবে নারী পুরুষের মাঝে এত বড় সামাজিক সাংস্কৃতিক বৈষম্যের দেয়াল আমরা সৃষ্টি করতাম না ।প্রকৃতপক্ষে নারীদের পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হলে মুখ বুজে সহ্য করতে হয় অনেক জুলুম আর নির্যাতন ।টিকে থাকার জন্য প্রযোজন হয় সংগ্রামের ।কারণ তারা সবখানেই উপেক্ষিত ।সমাজে না আছে তাদের অধিকার ,না আছে আত্নমর্যাদা ,না অর্থনৈ্তিক স্বাধীনতা।আর এ সব এভারেস্ট সমতুল্য বৈষম্যের মহা প্রাচীর যারা পাড়ি দিয়ে যে সব নারী নিজ পায়ে দড়ানোর চেষ্টা করেছে ,কর্মে আত্ননিয়োগ করেছে তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে ডাবল বারডেন’(একই ব্যক্তি কর্মক্ষেত্রের এবং বাড়ির কাজ সামলানো) নামক নির্যাতন।২০১৭-১৮ অর্থ বছরের বিবিএসের জরিপ অনুযায়ী, পুরুষ ও নারী উভয়ই কর্মজীবীএমন পারিবারিক পরিবেশে ৮৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই রান্নার কাজটি করতে হয় ওই নারীকেই। আর কর্মজীবী পুরুষের রান্না করতে হয় মাত্র আড়াই শতাংশ ক্ষেত্রে। কর্মজীবী ১০০ নারীর মধ্যে ৮৯ জনই কাপড় ধোয়ার কাজ নিজেই করেন। আর ১০০ কর্মজীবী পুরুষের ক্ষেত্রে এই কাজ করেন মাত্র ১২ জন। অন্য পুরুষদের কাপড় ধোয়ার এই কাজ করেন গৃহকর্মী (বেশির ভাগ নারী), পরিবারের অন্য নারী সদস্য অথবা লন্ড্রিতে করানো হয়। কর্মজীবী নারীদের ৮৮ শতাংশ ঘর পরিষ্কারসহ বাসার বিভিন্ন জিনিস সাফসুতরো রাখার কাজ করে থাকেন। পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার মাত্র ৭ শতাংশ।
ঘরের কেনাকাটার (শপিং) ক্ষেত্রে অবশ্য কর্মজীবী পুরুষের অংশগ্রহণ বেশি। কর্মজীবী পুরুষদের ৭৭ শতাংশই ঘরের কেনাকাটার কাজটি করে থাকেন। অন্যদিকে ২৬ শতাংশ কর্মজীবী নারী চাকরির পাশাপাশি সংসারের জন্য কেনাকাটার কাজটিও নিয়মিত করে থাকেন। পরিবারের শিশু, বৃদ্ধ ও অসুস্থ সদস্যদের দেখভালের দায়িত্বও বেশির ভাগ কর্মজীবী নারীকে সামলাতে হয়। ৫৩ শতাংশ কর্মজীবী নারী নিয়মিত এ কাজ করেন। বিপরীতে পরিবারের এসব সদস্যের যত্ন নেওয়ার কাজটি করে থাকেন ২১ শতাংশ কর্মজীবী পুরুষ। এসব নির্দিষ্ট কাজের বাইরেও সংসারের টুকিটাকি অন্য কাজে কর্মজীবী নারীর অংশগ্রহণ (৫০ শতাংশ) কর্মজীবী পুরুষের তুলনায় বেশি। এই জরিপ অনুযায়ী কর্মজীবী নারীরা পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগ পাচ্ছেন না।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, আমরা কেউ এটাকে অন্যায় মনে করছি না এমনকি সেই কর্মজীবী নারীও না ।এর মূল কারণ হল আমাদের ঐতিহ্যগত দৃষ্টিভঙ্গি এবং প্রথাগত বিশ্বাস। আমাদের আচার আচরণ,দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের সংস্কৃতি দ্বারা নির্মিত।আর এটা তৈরী হয় সামাজিকীকরণের মাধ্যমে ।সেই ছোট  বেলায় খেলার উপকরণই আমাদের শিখিয়েছে যে নারীই ঘরের যত সব কাজ করবে ।কোন ছেলে শিশু যদি হাড়ি-পাতিল নিয়ে খেলতে বেশি আগ্রহী হয় তবে তার মা বাবাই তাকে অনুৎসাহিত করে এবং বলে এটা মেয়েদের খেলা ।আর এ খেলা এক সময় তাদের কাজ হয়ে যায় ।আজও পাঠ্যপুস্তক ,দূরদর্শন থেকে আমরা শিখে যাচ্ছি এ বৈষম্য।সেখানে দেখানো হচ্ছে ,নারী কর্মস্থল থেকে এসে নাস্তা এবং বিশ্রামের বিছানা প্রস্তুত করে অপেক্ষা করছে তার পরিবারের অন্য সদস্যদেরজ জন্য ।হোক সে কর্মজীবী নারী ,তাতে কি ?নারী তো ।সুতরং এসব কাজ তো তারই ।আসলে পুরুষতান্ত্রিকতা আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করে আছে।তাই এ অবস্থার পরিবর্তনের জন্যে সবার আগে আমাদের পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।নারীদেরও সচেতন হতে হবে তবেই পরিবর্তন সম্ভব।


জসীম উদ্দীন
সমাজবিজ্ঞান বিভাগ 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

4 comments:

  1. যদি সমাজকে বদলাতে চাও, আগে নিজে বদলাও ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ঠিক কথা বলেছেন ৷
      ধন্যবাদ!!!

      Delete
  2. আপনি ঠিক বলেছেন

    ReplyDelete