Pages

Sunday, 21 April 2019

চদ্রনাথ জয়........Toure Review


 চদ্রনাথ জয়






ক্লাস, আস্যাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন আর পরীক্ষার চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে প্রকৃতির সান্নিধ্যে একটি দিন কাটানোর জন্যে সীতাকুণ্ডে ভ্রমনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই আমরা বিজয় একাত্তর হলের সমসজবিজ্ঞান বিভাগের সিক্ষার্থীরা। যেই কথা সেই কাজ ১১ তারিখ সন্ধ্যায় একযোগে আমরা ৪০ জন রওনা হলাম। কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে রাত ১০ টার ট্রেনে যাত্রা শুরু করলাম । সকাল ৮ টার দিকে সীতাকুণ্ড রেল স্টেশনে পৌঁছলাম । ওখানেই নাস্তা করে ব্যাটারী চালিত বাইকে রওনা হলাম চন্দ্রনাথ পাহাড়েহয়র পথে। চন্দ্রনাথ পাহাড় এখান থেকে বেশি দূরে নয় । শহর থেকে মাত্র দুই কিলোমিটারের পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছলাম চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাদদেশে। এদুই কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে গিয়ে মনে হলো যেন মন্দিরের শহরে বিচরণ করছি। হ্যাঁ, সত্যিই তাই সীতাকুণ্ডকে মন্দিরের শহর বলা হয়। রাস্তার দুই দিকেই রাস্তার দুই পাশেই নতুন পুরাতন অনেক মন্দির আছে। বাইক চালকের কথা শুনে তো আমি আরো অবাক হলাম! বললেন, এই সীতাকুণ্ডে প্রায় আড়াইশোর বেশি মন্দির আছে।
আমাদের ব্যাগ গুলো হেফাজতে রেখে দিলাম ওখানকার একটি দোকানে বিশ টাকার বিনিময়। পাহাড়ে ওঠার সুবিধার্থে লাঠি নিয়ে নিলাম। পাহাড়ে অঠার জন্য সুবিধাজনক পোশাক পরে নিলাম । পিঠে ক্যামেরার ব্যাগ নিয়ে লাঠি হাতে , দৃঢ় পদে অগ্রসর হলাম চন্দ্রনাথ জয়ের নেশায়।শুরুতেই সবাই একসাথে একটা ছুবি তুললাম। একটুখানি ওপরে উঠতেই চোখে পড়ল মস্ত বড় পাহাড়। কি সুন্দর দেখতে! সবুজে মুড়ানো। দেখে পরান জুড়িয়ে গেল। নিচ থেকে দেখেই চন্দ্রনাথ পাহাড়ের সৌন্দার্যের প্রেমে পরে গেলেম। আগ্রহ বেড়ে দ্বিগুণ হল। ইতিমধ্যেই আমরা কয়েক জন বন্ধু ছবি তোলার কারণে দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি। আরো ২ মিনিট এগিয়ে একটি টং দোকান সবাইকে পেলাম । সেখান থেকে স্যালাইন পানি কিনে নিলাম । পাহাড়ের মাঝে মাঝেই বিশ্রাম নেয়ার জন্য এবং হাল্কা কিছু খাওয়ার জন্য এমন দোকান আছে। এখানে বিশ্রাম নিয়ে আবার হাঁটা শুরু করলাম আমরা।
প্রথমদিকে তেমন কষ্ট না হলেও তিনশো ফুট থেকে ভ্রমণকারীকে উঠতে হবে খাড়া পাহাড় বেয়ে।বিপদ এখানেই শেষ নয় কখনো কখনো চলতে হবে এক পাশে পাহাড়ের গা ঘেঁষে আর অন্য পাশে খাদ নিয়ে। একবার পা ফসকালেই পড়তে হবে ৩০০-৪০০ ফুট নিচে। মাঝে মাঝে এই পথ এতটাই সরু যে, দুজন মানুষ একসঙ্গে উঠা-নামা করা প্রায় অসম্ভব। চলতে গিয়ে প্রাচীনকালের তৈরি কিছু সিঁড়িও পাবেন। কে কত সালে সে সিঁড়ি কেন বানিয়েছেন সাথে আছে তার নামফলকও। এগুলো কিছু ছবিও তুলে রেখেছি আমি। চারদিকে নিরব-নিস্তব্ধ। মাঝে মাঝে শুনতে পাবেন চেনা-অচেনা পাখির ডাক। দেখতে পাবেন ঝরনাও।আবার মাঝে মাঝে পাবেন ফলের গাছও। কখনো ইটের সিঁড়ি আবার কখনো মাটি কেটে তৈরি করা হইয়েছে সিঁড়ি।
প্রায় ঘন্টা দেড় পর ক্লান্ত শরীরে আমরা পৌঁছলাম প্রথম পাহাড়ের চূড়ায়। সেখানে রয়েছে শ্রী শ্রী বিরূপাক্ষ মন্দির।দোকান থেকে পূজার উপাদান ক্রয় করে পূজা দিচ্ছেন হিন্দু ধর্ম্বালম্বীরা। এটা তাদের শিব দেবতার বাড়ি। প্রতিবছর এই মন্দিরে শিবরাত্রি তথা শিবর্তুদশী তিথিতে বিশেষ পূজা হয়। এই পূজাকে কেন্দ্র করে সীতাকুণ্ডে বিশাল মেলা হয়। সীতাকুণ্ড চন্দ্রনাথ পাহাড় এলাকায় বসবাসকারী হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা প্রতি বছর বাংলা ফাল্গুন মাসে (ইংরেজী ফেব্রুয়ারী-মার্চ মাস) বড় ধরনের একটি মেলার আয়োজন করে থাকেন। যেটি শিবর্তুদর্শী মেলা নামে পরিচিত। এই মেলায় বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, ভুটান, থাইল্যান্ডসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য সাধু এবং নারী-পুরুষ যোগদান করেন।
এখানে কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে রওনা হলাম চন্দ্রনাথ পাহাড়ের দিকে। সেখানেও একটা মন্দির আছে , চন্দ্রনাথ মন্দির। বিরূপাক্ষ মন্দির থেকে চন্দ্রনাথ মন্দিরের ১৫০ ফুট রাস্তার প্রায় ১০০ ফুটই উঠতে হবে খাড়া পাহাড় বেয়ে এটা শুনে আরো বেশি ক্লান্ত হয়ে গেলাম । সেখানে নিজেকে সামলে রাখা অনেকটাই কষ্টকর।এই ১৫০ ফুট রাস্তায় বার বার বিশ্রাম নিতে হয়েছে। মনে হচ্ছিল ঘুমিয়ে পড়ি চদ্রনাথ পাহাড়ের সিঁড়িতে। অবশেষে খাড়া পাহাড় বেয়ে মাটি থেকে ১২০০ ফুট উপরে চন্দ্রনাথ পাহাড়ে উঠলাম আমরা ( মনির , হাদি, জুবায়ের এবং আমি)।চন্দ্রনাথ মন্দিরের বারান্দায় বসে খোশ গল্প করছিল আন্যরা । যোগ দিলাম সবার সাথে।সীতাকুণ্ডের সর্বোচ্চ উঁচু পাহাড় চন্দ্রনাথের চূড়ায় দাঁড়িয়ে আমরা। এখান থেকেই অবলোকন করা যায় দু’পাশের অপরূপ সুন্দর প্রকৃতি। একদিকে সমুদ্র আর অন্য দিকে পাহাড়ের নির্জনতা। ডানদিকে তাকালে মনে হয় সম্পূর্ণ অঞ্চলটাই সবুজ কার্পেট দিয়ে মুড়ানো। আবার বাঁ দিকে তাকাতেই ধরা পড়ে অফুরন্ত জলরাশি। এজন্যই চন্দ্রনাথ পাহাড় অয়াডভাঞ্চারপ্রিয় এবং প্রকৃতিপ্রেমী উভয় ভ্রমণকারীরই মিলনস্থলে পরিণত হয়েছে।
বিশ্রাম শেষে আমরা আবারো একসাথে ছবি তুললাম । রাশেদ ভাই এবং আঃ রহিম ভাইয়ের নেতৃত্বে নামতে আরম্ভ করলাম । চন্দ্রনাথ মন্দিরের পাশের এই পথ পুরোটাই পাকা সিঁড়ি করা কিন্তু খাড়া। তাই বুদ্ধিমানের কাজ হল বিরূপাক্ষ মন্দিরের রাস্তা দিয়ে ওঠা এর চন্দ্রনাথ মন্দিরের রাস্তা দিয়ে নামা। অনেককেই দেখেছি এর উল্টোটা করতে। আমরা ভুল করি নি কারণ আমাদের সাথে অভিজ্ঞ লোক ছিল যে আগেও এপর্বতে চড়েছে। নামার পথে দুই পাহাড়ের মিলনস্থলে একটি সুড়ঙ্গ পথ আছে এখানে সারাক্ষণই ঠাণ্ডা বাতাস প্রবাহিত হয়। সুড়ঙ্গে প্রবেশের পর কিছুটা ক্লান্তি দূর হল। নামার পর আরেকটি মন্দির পেলাম যেখানে ঐতিহ্যবাহী শ্যামা সঙ্গীত পরিবেশিত হচ্ছিল। ২৬-২৭ বছর বয়সী একজন শিল্পী গান করছিলেন । তন্ময় হয়ে তার মিষ্টি কণ্ঠের গান শুনছিলাম । স্মৃতি রক্ষার্থে ভিডিও করতে ভুলিনি। চন্দ্রনাথ পাহাড় থেকে বের হলাম। পাশের একটি পুকুরে গোসল করে নিলাম । অথিতি রেস্টুরেন্টে গিয়ে দুপুরের খাবার খেলাম । তারপর বিদায় জানালাম মন্দিরের শহরকে।

যান্ত্রিক শহর থেকে প্রকৃতির রাজ্যে ......Tour Review



যান্ত্রিক শহর থেকে প্রকৃতির রাজ্যে

   টিএসসি থেকে যাত্রা আরম্ভ করলাম আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপের  রোভাররা। গন্তব্য গাজীপুর সাফারি পার্ক, ভাওয়াল উদ্যান ও রোভার পল্লী। ঢাকা থেকে গাজীপুর সাফারি পার্ক মাত্র চল্লিশ কিলোমিটার দূরে।তাই বেলা ১১ টায় পৌঁছে গেলাম।

সাফারি কিংডম, গাজীপুর সাফারি পার্ক।


প্রবেশ করতেই ডান পাশে আছে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের ম্যাপ। মূলত সাফারি পার্কটি ৫টি অংশে বিভক্ত করা হয়েছে। ১. কোর সাফারি। ২. সাফারি কিংডম। ৩. বায়োডাইভার্সিটি পার্ক। ৪. এক্সটেনসিভ এশিয়ান সাফারি পার্ক। ৫. বঙ্গবন্ধু স্কয়ার।


প্রথমেই প্রবেশ করলাম সাফারি কিংডমে। ৫৫৬ একরের ওপরে তৈরি করা এই অংশে ঢুকতেই চোখে পড়ল নজরকাড়া ম্যাকাওল্যান্ড। এখানে আরও আছে নীল-সোনালি ম্যাকাও, সবুজ ম্যাকাও, টিয়া, আফ্রিকান গ্রে-প্যারট, পেলিক্যান, লুটিনো রিংনেক প্যারটসহ প্রায় ৩৪ প্রজাতির পাখি, রয়েছে প্রায় ২০ প্রজাতির মাছ। ক্রোকোডাইল ফিশ, টাইগার ফিশ ও অস্কার। রয়েছে চিকলেট মাছ যা ২০ সেকেন্ড পর পর রং পরিবর্তন করে।


এরপর দেখলাম প্রজাপতি সাফারি। যেখানে প্রায় ২৬ প্রজাতির প্রজাপতি রয়েছে। সাফারি কিংডমের একটি অংশে আলাদাভাবে নির্মাণ করা হয়েছে বিশাল তিনটি পাখিশালা। ধনেশ পাখিশালায় রয়েছে প্রায় আট প্রজাতির পাখি। এর মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির প্যারট, পিজেন্ট ধনেশ, ফ্লেমিঙ্গো, কালো সোয়ান ও বিরল প্রজাতির ম্যান্ডারিন ডাক। বাংলাদেশের মিনি আফ্রিকার সৌন্দর্য তরুণ রোভারদের বিমোহিত করেছে, রেখে দিয়েছে অতৃপ্ততা।


আরো আছে কোর সাফারি পার্ক । এখানে দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে দুটি জিপ ও দুটি মিনিবাস। মিনিবাসে চড়ে খুব কাছ থেকে দেখলাম প্রাকৃতিক পরিবেশে ছেড়ে রাখা বাঘ, সিংহ, কালো ভালুক, আফ্রিকান চিতা, চিত্রা হরিণ, সাম্বার ও গয়াল, হাতি, মায়া ও প্যারা হরিণ। 

আমাদের আরো দুই জায়গায় যেতে হবে তাই বাংলাদেশের মিনি আফ্রিকাকে অনিচ্ছার শর্তেও বিদায় জানাতে হল। আমরা রোভার পল্লীতে গিয়ে দুপুরের খাবার খেয়েই রওনা হলাম ভাওয়াল উদ্যানের পথে, প্রকৃতির টানে।

 

 

ভাওয়াল উদ্যানের শাল বৃক্ষের মাঝে ফুলের চাষ।

ভাওয়াল উদ্যানের পথ।।

বেলা ৩ঃ৩০ মিনিটের দিকে প্রবেশ করলাম সবুজের রাজ্যে। বিশুদ্ধ নিঃশ্বাস নেয়ার অফুরন্ত সুযোগ।  ভাওয়াল জাতীয় উদ্যানের মূল উদ্ভিদ হলো শাল। প্রায় ২২০ প্রজাতির গাছপালা আছে এ বনে। এর মধ্যে ৪৩ প্রজাতির বিভিন্ন রকম গাছ, ১৯ প্রজাতির গুল্ম, ৩ প্রজাতির পাম, ২৭ প্রজাতির ঘাস, ২৪ প্রজাতির লতা, ১০৪ প্রজাতির ঔষধি গাছ। গাছের সারির মাঝে পায়ে চলার পথ।  মাঝে  মাঝে আছে বসার ব্যবস্থা। হাটতে হাটতে ক্লান্ত হয়ে পড়লাম।খুবই তৃষ্ণার্ত ছিলাম। পানি পাচ্ছিলাম না । পরে অবশ্য এক ইজি-বাইক চালক আমাদের পানির সন্ধান দিয়েছিলেন। আমি পথ দিয়ে হাঁটছিলাম এর ছবি তুলছিলাম ।  উন্মাদ হয়ে গিয়েছিলাম আমি ভাওয়ালের ভয়ংকর সৌন্দার্যে। ঘন গাছ গাছালি মাঝে আঁকা-বাঁকা পথ, কখনো ফাঁকা মাঠ, বিল, আবার কখনোবা ছোট ছোট পুকুর। মাঝে মাঝেই ভেসে আসছে পাখির কিচির-মিচির আওয়াজ।

ওয়াচ টাওয়ার থেকে ভাওয়াল উদ্যান।

বক, দোয়েল, হটটিটি, মাছরাঙা, কুরা ঈগল, হাড়ি চাচা, বেনে বৌ, বুলবুল, নীলকন্ঠ, শালিক, চড়ুই,  ভাত শালিক ইত্যাদি পাখিগুলো দেখে আমি ফিরে গিয়েছিলাম জসীম উদদীনের পল্লী গাঁয়। নির্জন বনের মধ্যে হাঁটার সময় নানারকম পাখির কিচির-মিচির ডাকে আমি এক ধরনের অপার্থিব অনুভূতির স্বাদ আস্বাদন করেছি যা এ যান্ত্রিক শহর আমায় দিতে পারেনি।

ফেরার পথে আমি  প্রস্তাব করলাম শাল বনের মাঝ দিয়ে হাঁটার। সাথে ছিল বন্ধু ফুয়াদ, জাকারিয়া ভাই, মুস্তাফিজ ভাই, ফেরদাউস ভাই আরো অনেকে। শাল বনের মাঝে কাঁটা যুক্ত এক  ধরণের গুল্ম বৃক্ষ ছিল যা আমাদের পথ চলাকে বেশ কঠিন করে তুলেছিল। কিন্তু পায়ের নিচে শুকনা পাতার মর্মর আওয়াজে এক ধরনের নৈস্বর্গিক আনন্দ লাভ করেছি। শাল বনের মধ্যে লাল রঙের এক ধরনেত্র ফুলের চাষ করা হয়েছে। যা শাল বনের সৌন্দার্যকে শত গুনে বৃদ্ধি করেছে। 

 

 

ওয়াচ টাওয়ার

পুরো উদ্যান এক নজরে দেখার জন্য রয়েছে ওয়াচ টাওয়ার।ওয়াচ টাওয়ারে উঠে দেখলাম ভাওয়ালের ভয়ংকার সৌন্দার্য।মনে হচ্ছিল কোন শিল্পীর তুলিতে আঁকা সবুজ রাজ্য।কিছু ছবি তুলে নিলাম ওয়াচ টাওয়ারের চূড়া থেকে। নেমেই ডান হাতে আছে একটি মনোরম শিশু পার্ক।শিশু পার্কে ঢুকে একটু বাচ্চামি করলাম। বের হওয়ার সময় আপেলের বিচি দিয়ে তৈরি মালা কিনলাম আমরা তিন জন (জাকারিয়া ভাই, ফুয়াদ এবং আমি)।

 

ভাওয়াল উদ্যান ঘুরে দেখার মুহূর্ত।

ফিরে এলাম ওয়াচ টাওয়ারের সামনে। ওখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রোভার স্কাউট গ্রুপের কোষাধ্যক্ষ ও রোভার স্কাউট লিডার মাহমুদুর রহমান ও রোভার স্কাউট লিডার জুয়েল মিঞা স্যারের নেতৃত্বে চলছে বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতা সাথে ছিলেন এসআরএম ফয়সাল ভাই, লিওন ভাই ও আব্দুস সালাম ভাইসহ আরো অনেকেই। পুরস্কার বিতরণী হল। বাসে উঠেরওনা হলাম প্রকৃতির রাজ্য থেকে যান্ত্রিক শহরে।

Thursday, 7 March 2019

বাংলা ভাষার বিকৃত চর্চা বন্ধ হোক


বাংলা ভাষার বিকৃত চর্চা বন্ধ হোক

প্রতিদিনই সূর্য সূর্যোদয় হয়, দিন শেষে রাত আসে রাত্রি শেষে প্রভাতের রক্তিম আভা প্রকাশিত হলেই মানুষ ভুলে যায় পূর্বের দিনটিকে। কিন্তু কিছু কিছু দিন আছে যেদিনটি  কেউ ভুলতে পারে না ভুলে যায় না । যুগ যুগান্তরে ইতিহাসের পাতায় রয়ে যায় দিনটি। একুশে ফেব্রুয়ারি তেমনি একটি দিন বাঙ্গালির ইতিহাসে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বীজ বপিত হয়েছিল এই দিনে এই দিনের ভাষা  আন্দোলনের মাধ্যমেই আমাদের জাতিগত স্বকীয়তার প্রথম বহিঃপ্রকাশ ঘটে ১৯৫২ সালের এই দিনে সারা পৃথিবিকে অবাক করে দিয়ে মাতৃভাষার মান রক্ষার জন্য বুকের তাজা রক্ত রাজপথে ঢেলে দেয় সালাম, বরকত, রফিকসহ আরো অনেকে বিশ্বের বুকে এই প্রথম কোন জাতি তাদের ভাষার অধিকার রক্ষার জন্য নিজের জীবনকে বিসর্জন দিল এই আত্নত্যাগের স্বীকৃতিও মিলল বিশ্বে ১৯৯৯ সালে ‘২১ ফেব্রুয়ারি’কে  আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয়। সারা পৃথিবীর মানুষ ভাষা শহীদদেরকে  নতমস্তকে স্মরণ করে এই দিনেবাঙ্গালীর জন্য এই দিনটি গৌরবের।
তবে প্রশ্ন হল যে ভাষার জন্য আমাদের পূর্ব পুরুষরা জীবন দান করে গেলেন আমরা সেই ভাষার প্রতি কতটুকু যত্নবান? নাকি আমরা শুধু ২১ ফেব্রুয়ারির আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ? বর্তমানে আমাদের দেশের কিছু টেলিভিশন ও বেতার কেন্দ্রগুলো প্রতিযোগিতামূলক ভাবে বাংলা ভাষার বিকৃত চর্চা করছে। তারা বাংলার সাথে ইংরেজি মিশিয়ে নতুন বাংলিশ বা বাংরেজি ভাষার চর্চা করছেদ্বিধাহীন ভাবে তারা বাংলাকে ইংরেজি উচ্চারণে বলে যাচ্ছে। এবং আমরা গণমাধ্যমের এই বিকৃত চর্চাকে আধুনিকতার মানদন্ড হিসেবে গ্রহণ করেছি। বাংলার সাথে ইংরেজি শব্দ না মিশিয়ে আমরা কথা বলতে পারি না। কারো কথা বলার মাঝে ইংরেজি শব্দ না থাকলে তাকে অগাচণ্ডী মনে হয়। আর এর মাঝেই হারিয়ে যাচ্ছে অনেক বাংলা শব্দ। যার প্রমাণ আমরা কথা বলার সময় পাই। কথা-বার্তার মাঝে কিছু ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করি যেগুলোর বাংলা আমরা জানিনা। এভাবে লাগামহীন ভাবে ইংরেজি এবং হিন্দি মিশ্রিত বাংলা ভাষার চর্চা চলতে থাকলে আমাদের মাতৃভাষা তার স্বকীয়তা হারাবেসেই সাথে আমরা আমাদের সাংস্কৃতিক অস্তিত্ব সংকটে পড়ববাংলা ভাষাকে সর্বস্তরে ব্যবহারের জন্য আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু আইন করে কি এর ভাষার প্রয়োগ হয়এজন্য চাই ভাষা ব্যবহারকারীদের ভাষার প্রতি প্রকৃত ভালবাসা এবং সদিচ্ছা। প্রতি বছর আমরা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালন করি। ভাষা শহীদদের আত্নার মাগফিরাত কামনা করি। শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের সম্মানে খালি পায়ে হেঁটে গিয়ে পুষ্পাধার প্রদান করি। কিন্তু ভাষা দিবসের মর্মাথ যে মাতৃভাষার প্রতি ভালবাসা তা বুঝতে চেষ্টা করিনা। তাই ২০১৯ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি হোক মাতৃভাষা বাংলাকে সর্বস্তরে প্রয়োগ ও প্রতিষ্ঠার শপথ। সমুন্নত হোক ভাষা শহীদের সম্মান , সমহীমায় বেঁচে থাকুক মাতৃভাষা বাংলা।


Thursday, 14 February 2019

DUCSU Election


সময়ের প্রয়োজনে ডাকসু নির্বাচন


 দীর্ঘ ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন।একে দেশের মিনি পার্লামেন্ট বা দ্বিতীয় সংসদও বলা হয়ে থাকে।  ১৯৯০ সালের পর বিভিন্ন সময় তফসিল ঘোষিত হলে নির্বাচন হয়নি একবারও। ডাকসুর অতীত ইতিহাস ঘাটলে দেখা যাবে, প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই ডাকসু এ জাতির বিপদের সময় কান্ডারীর ভূমিকা পালন করেছে।১৯৫২ এর ভাষা আন্দলোন, ৬২ শিক্ষা আন্দলোন,৬৬ ছয় দফা দাবি, ৬৯ গণ অভূত্থান,সত্তরের নির্বাচন, সর্বশেষ ১৯৭১ সালে আমাদের চুড়ান্ত বিজয়েও এ ডাকসুর ভূমিকা অবিস্মরণীয়। কিন্তু সেই ডাকসু নির্বাচনকে দাবিয়ে রাখা হয়েছিল দীর্ঘ ২৮ বছর। জাতির দূর্যোগময় মুহূর্ত গুলোতে ডাকসু যুগন্তকারী ভূমিকা পালন করেছে তা আমরা সবাই জানি। কিন্তু প্রশ্ন হল এ মুহুর্তে ডাকসু নির্বাচন কতটুকু গুরুত্ব রাখে?
 একটি দেশ সামনে এগিয়ে চলার জন্য প্রয়োজন যোগ্য নেতৃত্ব। গত কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশ পায়নি   বঙ্গবন্ধুর মত কোন আবিসংবাদিত নেতাআসেনি কোন ভাসানী , সোহরাওয়ার্দী যোগ্য নেতা থাকবেই বা কেন? যোগ্য নেতা তৈরির আতুড়্ঘরে তো তালা দিয়ে রাখা হয়েছে যে ডাকসু মুক্তিযুদ্ধের চেতনার চর্চা কেন্দ্র সে ডাকসু বলতে এখন বুঝায় এক টাকার চা, তিন টাকার সিঙ্গারা, সামুছা এটা একটা ক্যাফেটেরিয়ার নাম
 স্বয়ং রাজনীতি যাদের অপেক্ষায় থাকে সেই তরুণরা আজ রাজনীতি বিমূখ আর  দলীয় যে রাজনীতি চলছে তা স্পষ্ট অতিরাজনীতিকরণ ছাড়া কিছু নয় এতে নেতার পরিমাণ অনেক বেশি কিন্তু যোগ্য নেতা নেই বললেই চলে একদল শিক্ষক দলীয় রাজনীতিকেই মূখ্য দায়িত্ব হিসেবে নিয়েছেনছাত্র- শিক্ষকের মাঝের মধুর সম্পর্কের দলীয় রাজনীতি আজ কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে । ডাকসুই পারে এ কাঁটা উপড়ে ফেলে শিক্ষক ছাত্রদের মাঝে সেতু বন্ধন রচনা করতে শুধু রাজনৈতিক অঙ্গনেই নয় একাডেমিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও পিছিয়ে পরেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ অনুযায়ী, সিনেটের ১০৪ জন সদস্যের মধ্যে জন পাঁচ ছাত্র প্রতিনিধি থাকার কথা কিন্তু দুঃখের বিষয় সেখানে ছাত্রদের দঃখ দুর্দশার কথা তুলে ধরার কেউ নেই ৩য় বর্ষে উঠে হলে সিটের ব্যবস্থা হয় না অনেকেরহল ক্যান্টিন গুলোর খাবার মান নিয়ে কথা বলতেও এখন ঘৃণা হয়ডাকসু নির্বাচন হবে ভিপি নির্বাচিত হবে সাধারণ ছাত্রদের ভোটে থাকবে জবাব্দিহিতা। বন্ধ হবে লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি। সিনেটে  ছাত্রদের সকল দুর্দশার কথা ধ্বনিত হবে ডাকসু নেতসাদের কণ্ঠে গবেষণা খাতে আসবে আমুল পরিবর্তন সাংস্কৃতিক অঙ্গন আবার হয়ে উঠবে প্রাণচাঞ্চল্যসর্বপরি আমার মাতৃভূমি পাবে কিছু যোগ্য নেতা। যাদের হাতেই গড়ে উঠ   বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা । এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ ।